প্রযুক্তির এই যুগে অনলাইন থেকে ইনকাম করা যায়, এই বিষয়টি প্রায় সবারই জানা। তবে অনলাইন থেকে ঘরে বসে টাকা ইনকাম করার উপায় আজও অনেকের কাছে অজানা রয়ে গেছে। তাই নতুনদের মাঝে অনেক মানুষ আছে, যারা অনলাইনে ক্যারিয়ার বিল্ড করার উদ্দেশ্য নিয়ে এলেও সঠিক বিষয়বস্তু না জানার কারণে কিছুই করতে পারে না।
এর প্রধান কারণ হলো সঠিক স্কিল নেই বা অনলাইন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানের অভাব। অনলাইনে ঘরে বসে টাকা ইনকাম করার উপায় অনেক রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি সঠিক গাইডলাইন মেনে না আগাতে পারেন, তাহলে উপার্জন আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
প্রথমেই আপনাকে অনলাইন বা ইন্টারনেট জগৎটাকে এনালাইসিস করতে হবে। আপনি জানলে হয়তো অবাক হবেন, বর্তমান পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭.৯ বিলিয়ন। এর মধ্যে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মোট জনসংখ্যা ছিল ৩.৯৭ বিলিয়ন। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যা কিনা ৪.৬৬ বিলিয়নে এসে পৌঁছেছে!
সুতরাং আপনি কিছুটা অনুমান করতে পারছেন যে, দিন যত পার হবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যত বাড়বে অনলাইন ইনকামের তত বেশী পথ তৈরি হবে।
আমি ২০১৩ সাল থেকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত আছি। দীর্ঘ এই পথ চলায় আমি দেখেছি, অনলাইনে অনেকেই নিজের ক্যারিয়ার বিল্ড করতে সক্ষম হয়েছে। আবার অনেকেই যথাযথ গাইডলাইন না মেনে কাজ করায় অনলাইন থেকে ঝরে গেছে।
তাহলে ঘরে বসে টাকা ইনকাম করার উপায় কি?
অনলাইনে উপার্জনের পথ কিছুটা কঠিন হলেও অসম্ভব কিন্তু নয়। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে আজ এমন কিছু বিষয় শেয়ার করবো, যা আপনার অনলাইন যাত্রা শুরু করার জন্য বিশেষভাবে কাজে দেবে। আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটটি ঘুরে আসুন, জানুন কিভাবে স্কিল ডেভেলপ করতে হয় এবং কিভাবে অনলাইন থেকে ইনকাম করতে হয়।
অনলাইন থেকে কিভাবে ইনকাম হয়?
ইন্টারনেট হলো প্রযুক্তির একটি সৃষ্টি। ইন্টারনেটের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে কমিউনিকেশন তৈরি করা। আপনি পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই থাকুন না কেন, ইন্টারনেটের সাহায্যে আপনি চাইলে বিভিন্ন মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। এই ধরনের কমিউনিটি এবং সহজ যোগাযোগকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে বিভিন্ন বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান গড়ে উঠেছে।
অফলাইন বাণিজ্যের চেয়েও অনলাইন বাণিজ্য এখন মানুষের কাছে সহজতর প্রক্রিয়া। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বেশীর ভাগই এখন অনলাইন ভিত্তিক কাজ করতে পছন্দ করে। আর এ বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে দুটি শ্রেণী তৈরি হয়েছে। একটি হলো যারা বাণিজ্য পরিচালনা করছে, অপরটি যারা ক্রেতা হয়ে সেবা গ্রহণ করছে।
অনলাইনে কোন ধরণের বাণিজ্য হয় এই বিষয়ে প্রায় সকলেই জানেন। তাই নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন বোধ করছি না। তবে ছোট্ট করে বলি, স্বাভাবিক জীবন যাপনে আমরা যেই সমস্ত কাজ করে থাকি, অনলাইনেও ঠিক তাই হয়।
অনলাইনে ইনকাম করার পদ্ধতি
অনলাইন থেকে অনেকভাবেই ইনকাম করা যায়। তার মাঝে জনপ্রিয় ইনকাম পদ্ধতি হলো কোন পণ্য বিক্রয় করা, সার্ভিস প্রোভাইট করার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করা এবং ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদির কাজ করা।
অনলাইন ইনকাম বলতে এই না যে, আকাশ থেকে টাকা আসে। আপনাকে অবশ্যই যে কোন এক বা একাধিক বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হবে। নিজের দক্ষতা বা অভিজ্ঞতাকে মানুষের কাছে সার্ভিস হিসেবে প্রোভাইট করার মাধ্যমে আপনি চৎমকার একটি অনলাইন ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবেন।
অনলাইন ক্যারিয়ার গঠন বিষয়ক বাংলাদেশে ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা নতুনদেরকে বিভিন্ন স্কিল শিক্ষা দিয়ে অনলাইন ক্যারিয়ার গঠনের জন্য সুযোগ করে দিচ্ছে। আমি এমনই কিছু জনপ্রিয় স্কিল সম্পর্কে আলোচনা করবো, যেগুলো শেখার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার অনলাইন ক্যারিয়ার বিল্ড করতে পারবেন।
অনলাইন ইনকামের জন্য প্রয়োজনীয় স্কিল
অনলাইনে ইনকাম করতে হলে আপনাকে এমন কিছু বিষয়ের উপর স্কিল ডেভেলপ করতে হবে, যা প্রকৃতপক্ষে আপনার কাজে লাগবে। তাছাড়া, এমন স্কিল ডেভেলপ করা উচিত, যেই স্কিলের চাহিদা সব জায়গায় রয়েছে। নিচে অনলাইন ইনকামের জন্য প্রয়োজনীয় স্কিলগুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হল।
১. ওয়েব ডিজাইন
অনলাইন ভিত্তিক ক্যারিয়ারগুলোর মধ্যে ওয়েব ডিজাইন খুবই স্মার্ট একটি পেশা। এই পেশার সাথে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়িত রয়েছে। আপনি যদি উন্নত স্কিল ডেভেলপ করতে চান এবং দীর্ঘ মেয়াদী প্যাসিভ ইনকাম চান, তবে ওয়েব ডিজাইন আপনার জন্য খুবই সম্ভাবনাময় একটি স্কিল হতে পারে।
ওয়েব ডিজাইন শেখার মাধ্যমে আপনি অনলাইন থেকে হিউজ পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। বাংলাদেশে এমনও ওয়েব ডিজাইনার আছে, যাদের মাসিক ইনকাম লক্ষ টাকার উপরে। এটা শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আপনি যদি ফাইভার বা আপওয়ার্ক এই ধরণের মার্কেটপ্লেসে যান, তবে অনেক বাংলাদেশী ওয়েব ডিজাইনারের দেখা পেয়ে যাবেন।
ওয়েব ডিজাইন শেখার জন্য আপনার বিশেষ কোন একাডেমিক যোগ্যাতার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি মোটামুটি ইংরেজি বোঝেন এবং কম্পিউটার চালাতে জানেন, তবে আপনি ওয়েব ডিজাইন শিখতে পারবেন। ওয়েব ডিজাইন শেখার জন্য আপনাকে অন্তত ৩-৬ মাস পর্যন্ত সময় দিতে হবে।
আপনি যদি এই সময়টুকু সঠিকভাবে ওয়েব ডিজাইন শেখার কাজে বিনিয়োগ করেন, তবে আপনাকে ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে পরিচয় দিতে খুব বেশী সময় লাগবে না। অনলাইন মার্কেটে ওয়েব ডিজাইনের অনেক চাহিদা রয়েছে।
আপনি যদি এই বিষয়ে দক্ষ হতে পারেন তবে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে প্রতি মাসে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যেটা আপনার স্মার্ট ক্যারিয়ার গঠনে নতুনত্ব এনে দেবে।
২. গ্রাফিক ডিজাইন
চাহিদাগতভাবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত জিনিসের নাম গ্রাফিক। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং পেশাগতভাবে গ্রাফিক ডিজাইনারের মান অনেক উন্নত। বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে গ্রাফিক ডিজাইন এমন একটি প্রয়োজনীয় বিষয়, যা আমাদের প্রত্যেকেরই কাজে লাগে।
বই-পুস্তক থেকে শুরু করে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সরকারী এবং বেসরকারি সকল কার্যক্রমেই গ্রাফিক ডিজাইন ব্যবহার করা হয়। তাই এ কাজের রয়েছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা।
গ্রাফিক ডিজাইন শিখতেও বিশেষ কোন একাডেমিক যোগ্যতা লাগে না। কম্পিউটারের বেসিক জানলেই গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়া সম্ভব। গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য আপনাকে অন্তত ১ থেকে ৩ মাস সময় দিতে হবে। আপনি যদি নিয়মিতভাবে এই সময়টুকু গ্রাফিক ডিজাইন শেখার কাজে ব্যয় করেন, তবে আপনি খুব সহজেই গ্রাফিক ডিজাইন শিখে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর কাজ করছে এবং এরই ওপর ভিত্তি করে তাদের ক্যারিয়ার গড়েছে। গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে আপনি অনেক ভাবেই ক্যারিয়ার বিল্ড করতে পারবেন।
যেমন: কোন গ্রাফিক ডিজাইন কোম্পানিতে পার্মানেন্ট জব করতে পারবেন। অথবা চাইলে গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর নিজস্ব দোকান দিয়ে ক্যারিয়ার বিল্ড করতে পারবেন। পাশাপাশি অনলাইনে কোন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অথবা কোন মার্কেটপ্লেসে সার্ভিস দিয়েও ক্যারিয়ার বিল্ড করতে পারবেন।
৩. ডিজিটাল মার্কেটিং
অনলাইন ইনকামের অনেক বড় একটা অংশে রয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রি। ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়টি বিভিন্নভাবে বিভক্ত। যেমন ব্লগিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, এসইও মার্কেটিং ইত্যাদি। অল্প কথায় ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেয়া সম্ভব না। তাই আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এ আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে এই লেখাটি পড়ুন ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
৪. ব্লগিং
ব্লগিং মূলত লেখালেখির একটি পেশা। আপনার যদি লিখতে ভালো লাগে তবেই আপনি ব্লগিং করতে পারবেন। ব্লগিং করেও আপনি একটি চমৎকার ক্যারিয়ার বিল্ড করতে পারবেন। লেখালেখির জন্য আপনাকে এমন কিছু বিষয় সিলেক্ট করতে হবে, যেই বিষয়গুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ইন্টারেস্টিং হয়।
ব্লগিং করে আপনি অনেকভাবেই ইনকাম করতে পারবেন। তার মধ্যে জনপ্রিয় হলো গুগল এডসেন্স এবং অ্যাফিলিয়েট লিংক জেনারেট করে। গুগল এডসেন্স হলো গুগলেরই একটি সার্ভিস। যারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানির প্রচার-প্রসারে অর্থ চুক্তিতে বিজ্ঞাপন পরিবেশন করে।
গুগল এডসেন্স সম্পর্কে সকলেই জানেন। তাই এই বিষয়ে বিশেষ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি ব্লগিং করতে পছন্দ করেন, তবে আপনার ব্লগে গুগল এডসেন্স ব্যবহার করতে পারেন এবং এখান থেকে একটি প্যাসিভ ইনকাম সোর্স তৈরি করতে পারবেন।
৫. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
মনে করুন, আমার কোম্পানির একটি প্রোডাক্ট আপনি বিক্রি করে দিলেন, তার বিনিময়ে আপনাকে আমি প্রোডক্টের মোট বিক্রয় মূল্যের একটি অংশ দিয়ে দিলাম। এটাই মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ব্লগিংয়েরই একটি অংশ। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে ব্লগিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
এটিও একটি জনপ্রিয় প্যাসিভ ইনকাম প্রক্রিয়া হতে পারে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শেখার জন্যও একাডেমিক বিশেষ কোন যোগ্যতার অধিকারী হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে আপনাকে কন্টেন্ট রাইটিং বা ব্লগিং করার যোগ্যতা থাকতে হবে। কারণ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বিষয়টা ব্লগিং কেন্দ্রিক একটি পেশা।
৬. এসইও মার্কেটিং
এসইও (SEO) এর পূর্ণরূপ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। এসইও-এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন ওয়েবপেজকে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্ক করানো। অর্থাৎ, সার্চ ইঞ্জিন থেকে সংরক্ষিত কোন তথ্যকে সহজেই খুঁজে বের করার মাধ্যমকে এসইও (SEO) বলে। আমরা যখন কোন কিওয়ার্ড লিখে গুগলে সার্চ করি, তখন সেই কিওয়ার্ড এর ভিত্তিতেই তথ্য দেখতে পাই। এটা মূলত এসইওর মাধ্যমেই হয়।
এসইও খুবই জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটিং সিস্টেম। যেটার মাধ্যমে খুব সহজেই সার্চ ইঞ্জিন ভিত্তিক আপনার কাঙ্খিত টার্গেট পূরণ করতে পারবেন। এসইওর কাজ শেখার জন্যও আপনার খুব বেশী পড়াশোনা থাকতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। কন্টেন্ট এবং সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলেই এসইওর কাজ আপনি খুব সহজেই শিখতে পারবেন।
শেষ কথা
উপরোক্ত আলোচনায় আমি আপনাকে ঘরে বসে টাকা ইনকাম করার উপায় সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তবে অনলাইন থেকে ইনকাম করার আগ্রহ যাদের আছে, আমি তাদেরকে রিকমেন্ড করবো আপনারা এই পথে পা বাড়ানোর আগে অনলাইন সম্পর্কে সুস্পষ্ট জেনে নিন। তারপর যে কোন বিষয়ের উপর স্কিল ডেভেলপ করুন।
তবে আমি এমন স্কিল ডেভেলপ করার প্রতি সবাইকেই উৎসাহিত করি, যা সত্যিকার অর্থে আপনার ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক হবে।
উপরে যে বিষয়গুলো আলোচনা করেছি, পছন্দ অনুযায়ী তার যে কোনটিই আপনি শিখতে পারেন। আবার চাইলে শুধুমাত্র একটি বিষয় শেখার মাধ্যমেই ক্যারিয়ার বিল্ড করতে পারবেন। এমন বিষয়ের পিছনে ছুটবেন না, যা আপনার কখনই ক্যারিয়ার হতে পারে না।
আপনি চেষ্টা করবেন আপনার স্কিল ডেভেলপ করতে। মনে রাখবেন, যাদের স্কিল আছে তারা কখনই বসে থাকে না। তাই স্কিল অর্জনে মনোযোগী হন, সফলতা আপনাকে ধরা দেবেই ইনশাআল্লাহ।